সোনাইমুড়ী উপজেলাবাসীর প্রধান ভাষা বাংলা। শতকরা ১০০ ভাগ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলেন। সোনাইমুড়ীবাসীর ভাষায় আঞ্চলিকতার আরবি, ফার্সি শব্দের প্রভাব রয়েছে। লোকচরিত্রের এসব বৈশিষ্ট্য লোকসাহিত্যেও প্রভাব ফেলেছে।
এখানে এক সময়ে আকাশ শিল্পী গোষ্ঠি, নবোদয় শিল্পী গোষ্ঠি ও ‘সোনাইমুড়ী গণমুখ’ নামক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো এ অঞ্চলে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান গীতিআলেখ্য পরিবেশন করত। কালের বিবর্তনে এবং বিভিন্ন সমস্যার কারণে সংগঠনগুলোর বিলুপ্তি ঘটে। বর্তমানে ‘এসো গান শিখি’ ও ‘সোনাইমুড়ী সংগীত একাডেমী’ এ অঞ্চলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন এবং নাটক, গীতিআলেখ্য পরিবেশন করে থাকে। বাংলাদেশে প্রচলিত বাউল, মারফতি, ভান্ডারি, মুর্শিদি, খেউড়, টম্পা, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি ও জারিগান সোনাইমুড়ী উপজেলায় বিরল। এখানে ওখানে কিছু কিছু মারফতি, ভাটিয়ালি ও ভান্ডারি গানের সুর মাঝে মাঝে শোনা যায়। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যেসব ধাঁধাঁ, প্রবাদ, ডাক ও খনার বচন, লোককাহিনী, লোকবিশ্বাস, ছড়া, লোকগীতি প্রভৃতি প্রচলিত রয়েছে সোনাইমুড়ীর নিজস্ব লোকসাহিত্যের পাশাপাশি সেগুলোও স্থান পেয়েছে। এসব ধাঁধাঁ, প্রবাদ, ডাক ও খনার বচন, লোককাহিনী, লোকবিশ্বাস, ছড়া, লোকগীতি প্রভৃতি বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে সব জায়গায় একই ধরনের। আঞ্চলিক ভাষার প্রভাবে কিঞ্চিত পার্থক্য দৃষ্ট হলেও ভাব ও মিলের দিক দিয়ে কোনও পার্থক্য নেই। নিচে এ অঞ্চলের লোকসাহিত্যের ধারায় প্রবাদ, ডাক ও খনার বচন, লোকগীতি, ছড়া, আঞ্চলিক গান ইত্যাদি বিশেষভাবে পরিচিত। সোনাইমুড়ীর প্রাচীনতম লোকসাহিত্যের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ধাঁধাঁ। আকারে ছোট হলেও সরসতা ও বুদ্ধিগম্য রহস্য মমতার দরুন ধাঁধাঁর সাহিত্যিক আবেদন অনস্বীকার্য। অতীতে ধাঁধাঁর আবেদন ছিল অপরিসীম। ড. কাজী দীন মুহাম্মদ যথার্থই বলেছেন, ‘ধাঁধাঁ ও হেঁয়ালীর মধ্য দিয়ে আমাদের প্রাত্যহীক জীবনের যে কোন বিষয় অবলম্বন করেই হাস্য রসের সৃষ্টি, চিন্তার অনুশীলন, বুদ্ধির বিকাশ ও কল্পনার অভিযান শুরু হতে পারে।
সোনাইমুড়ী লোকজীবনের সাথে ধাঁধাঁ অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। নিচে কয়েকটি ধাঁধাঁ তুলে ধরা হলো-
১. ঘর আছে দুয়ার নাই
মানুষ আছে কথা নাই।
উঃ কবর
২। রাজার মাঁইয়া কুড়ি
এক বিয়ানে বুড়ি।
উঃ কলা গাছ।
৩। এক আঁতির (হস্তীর) দুই মাতা (মাথা)
আঁতি যায় কলকাতা।
উঃ নৌকা।
৪। এক বুড়ির তিন মাতা
বুড়ি খায় লতা হাতা।
উঃ উনুন/চুলা।
৫। মুঁয়ে খায় আগে
হেই জিনিস বেকের লাগে।
উঃ কলসী।
বিয়ে- শাদীতে, মজলিশে- দরবারে, রুছমতের সময়ে বর অন্দর মহলে মেয়ে মজলিশে গেলে নিম্নে বর্ণিত ধাঁধাঁ জাতীয় শোকের মাধ্যমে রীতিমতো প্রতিযোগিতা হয়। এক পক্ষ শোকের মাধ্যমে প্রশ্ন করলে অপর পক্ষ তার জওয়াব দেয়।
প্রশ্নঃ লোয়ার সন্দুক হিতলের তালা
দুলাভাই গরে আইতে বিষণ জ্বালা।
উঃ করাচির চারি, লন্ডনের তালা আ-করে জাইতে লাগে কতই না বালা।
প্রশ্নঃ সেলাম সেলাম ওগো দুলাভাই
খোঁজ করিয়া লইবেন সেলাম আমনারা সবাই
আমরা অইছি গেরামের মাঁইয়া বাইনতাম জানি ধান আজার টেঁয়া মান দিতে কিল্যাই এত্ত পেরেশান?
উঃ হলফাত করি আঁনেন হাঁনি
তই দিউম ছোলকের মানি।
প্রশ্নঃ আচ্ছালামুআলাইকুম এয়া
দুলা আইছে বিয়া কৈত্তো
আমনারা আইছেন কেয়া?
উঃ ওয়ালায়কুম আচ্ছালাম ওবা
দুলা আইছে বিয়া কৈত্তো
আমরা আইছি শোবা।
প্রশ্ন- ঘরে গরম বাইরে ঠান্ডা
দুলাভাই খাড়াই থাঁন
দুই চাইর ঘন্টা।
উঃ উলি গাছের ঢুলি
আশমান গেছে ঢুলি
কোন বাবিসাব গরে আছেন
দুয়ার দেনগো খুলি।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস